বশির আল–মামুন, চট্টগ্রাম : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে আট সংসদীয় আসনের ১৮ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ১২ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন গরমিল থাকায় তাদের প্রার্থিতা বাতিল করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
বাতিল হওয়াদের মধ্যে চট্টগ্রাম-১ আসনে মীরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য দিদারুল আলম ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুস ছালামও আছেন।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন কমিশনে জমা দেওয়া এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরে মিল না পাওয়ায় তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
চট্টগ্রাম-২ (সীতাকুণ্ড) আসনে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। ভোটারের স্বাক্ষরে মিল না পাওয়ায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। তারা হলেন- মোহাম্মদ শাহজাহান, মো. রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী ও মোহাম্মদ গোলাম নওশের আলী।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। অন্য আসনের ভোটারকে সমর্থনকারী করায় জাকের পার্টির মো. নিজাম উদ্দিন নাছিরের এর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। দলীয় মনোনয়ন না থাকা এবং ফরম-২১ পূরণ না করায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী আমিন রসুলের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য দিদারুল আলমসহ চার জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। দিদারুল আলম আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তবে দল থেকে এবার তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। দলীয় মনোনয়নপত্র সংযুক্ত না করায় তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। আয়কর রিটার্ন দাখিল না করার কারণে বিএনএফ প্রার্থী মোহাম্মদ আক্তার হোসেনের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। ভোটারের সমর্থন যাচাইয়ে গরমিল পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ইমরান এবং প্রস্তাবকারীর নামের বিপরীতে ভোটার নম্বর সঠিক না থাকায় অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সালা উদ্দিনের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী ও মোহাম্মদ নাছির হায়দার করিম নামে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। তাদেরও সমর্থনকারী ভোটার তালিকায় গরমিল ছিল।
একই কারণে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউল আজমের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও) আসনের মোট পাঁচ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এর মধ্যে ভোটারের স্বাক্ষর তালিকায় ২ হাজার ৭২২ নম্বর সিরিয়াল না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুস ছালামের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান। ভোটারের সমর্থন যাচাইয়ে গরমিল পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কুমার চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ব্র্যাক ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের ঋণ খেলাপি হওয়ায় বাংলাদেশ কংগ্রেসের এর প্রার্থী মোহাম্মদ মহিবুর রহমান বুলবুলের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
ভোটারের স্বাক্ষর তালিকায় ছয়টি স্বাক্ষর সঠিক না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আরশেদুল আলমের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। প্রস্তাবকারী, সমর্থনকারী, হলফনামা ও দলীয় মনোনয়নপত্র না থাকায় বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মনজুর হোসেন বাদলের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে সাত প্রার্থীর মধ্যে একজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি দাখিল না করায় সোমবার পর্যন্ত তা দাখিলের জন্য সময় দেওয়া হয়।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম-৭, চট্টগ্রাম-৯, চট্টগ্রাম-১০, চট্টগ্রাম-১১, চট্টগ্রাম-১২, চট্টগ্রাম-১৪, চট্টগ্রাম-১৫ ও চট্টগ্রাম-১৬ আসনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাচাই করা হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘মনোনয়নপত্রের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনযুক্ত স্বাক্ষর জমা দিতে হয়। অধিকাংশ প্রার্থীর জমা দেওয়া স্বাক্ষর গরমিল পাওয়ায় তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। তবে যেসব প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তাদের আপিল করার সুযোগ আছে।’
চট্টগ্রামে ১৬টি আসনে প্রার্থী হয়েছেন ১৪৯ জন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণ ৭ জানুয়ারি।
Leave a Reply